ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এবারই প্রথম ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার অদূরে গাজীপুরে ৭৫ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে বিশ্বমানের প্রযুক্তিনির্ভর বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়। আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে 'ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ' আইন নীতিগত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের কথা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টি নির্মিত হলে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং উচ্চতর প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত ডিজিটাল টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, ন্যানোটেকনোলজি, ডিজিটাল ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট, অ্যাডভ্যান্সড টেকনোলজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠদান এবং গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের সর্বনিম্ন পদ হবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পিএইচডি অথবা সমমানের ডিগ্রিধারী সহকারী অধ্যাপক। কর্মরত শিক্ষক, গবেষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবেন না। তাদের কেউ এমপি কিংবা স্থানীয় সরকারের প্রার্থী হওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা পেলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব আরোপসহ বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ-সুবিধা বাড়বে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে একটি ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি নির্মাণের ঘোষণা দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত নামটিও তিনি দিয়েছেন। পরে বিভিন্ন পর্যায়ে যাচাই-বাছাই শেষে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের বিষয়ে আইনের খসড়া প্রণয়ন করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার চন্দ্রা এলাকায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ৭৫ বিঘা জমির ওপর এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি রয়েছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিকে বেগবান করতে একটি গবেষক দল তৈরি, একবিংশ শতাব্দীর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জাতীয় লক্ষ্য ত্বরান্বিত করতে একটি অনুকরণীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি স্থাপন করা অত্যাবশক। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ধারণ করে এ বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল প্রযুক্তির অভিনব ও বহুবিধ ব্যবহারের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে তার স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে, এই বিশ্ববিদ্যালয় হবে তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
দেশি-বিদেশি শিক্ষক ও গবেষকদের আকৃষ্ট করতে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভাইস চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, শিক্ষক ও গবেষকদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো থাকবে। পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগের জন্য প্রশাসনে অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তিনজন শিক্ষাবিদের একটি প্যানেল চ্যান্সেলরের কাছে উপস্থাপন করবে। চ্যান্সেলর এই প্যানেল থেকে একজন শিক্ষাবিদকে চার বছর মেয়াদের জন্য ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ দেবেন। তবে কোনো ব্যক্তি একাধিক্রমে বা অন্যভাবে দুই মেয়াদের বেশি সময়ের জন্য ভাইস চ্যান্সেলর পদে নিয়োগের যোগ্য হবেন না।
দেশি-বিদেশি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার ব্যাপক লিংক প্রোগ্রাম থাকবে। জ্ঞান আহরণ, জ্ঞান বিতরণ ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টির জন্য কর্মরত সব শিক্ষক ও গবেষক একটি চলমান মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার অধীনে থাকবেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা এবং এ ধরনের সব কাজ হবে প্রযুক্তিনির্ভর। সব পাঠাগার সর্বাধুনিক ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন হবে। এটি মূলত একটি স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান। তবে প্রয়োজনে স্নাতক পর্যায়ে পাঠদানের সুযোগও সৃষ্টি করা যাবে।
স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য আবাসিক সুযোগ-সুবিধাসহ সম্মানজনক হারে বৃত্তি এবং ভাতার ব্যবস্থা থাকবে। তাত্তি্বক ও প্রায়োগিক গবেষণার ওপর সমগুরুত্ব আরোপ করবে এই বিশ্ববিদ্যালয়। রাষ্ট্রপতি হবেন ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য কোনো দেশি ও বিদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুদান নেওয়া যাবে। এতে একজন করে ভাইস চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, সেন্টারের পরিচালক, রেজিস্টার, বিভাগীয় প্রধান, গ্রন্থাগারিক, প্রভোস্ট, পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ), পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন), পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ), পরিচালক (অর্থ ও হিসাব), প্রধান প্রকৌশলী এবং প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা থাকবেন।
Email *
Comment
How much is:
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS