Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

Title
চাকরির জন্য ধরনা না দিয়ে উদ্যোক্তা হন: প্রধানমন্ত্রী
Details
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাকরির  পেছনে ধরনা না দিয়ে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরই উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, চাকরির জন্য দুয়ারে-দুয়ারে না ঘুরে এবং কারো মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। পুঁজির জন্য সরকারের দেয়া অর্থ সরবরাহসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজে স্বাবলম্বী হয়ে অন্যকে সুযোগ করে দিতে হবে। ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা না করতে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে নির্মিত বিশাল প্যান্ডেলে ‘ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তা সম্মেলন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ের ডিজিটাল সেন্টারগুলোর প্রায় ১১ হাজার উদ্যোক্তা এ সম্মেলনে অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের উদ্যোগে আয়োজিত এ সম্মেলনে উদ্যোক্তারা ছাড়া বিদেশি কুটনৈতিক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থ্যার প্রতিনিধি, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না। অর্থও আমাদের রয়েছে। কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে যেকোনো যুবক জামানতবিহীন ঋণ নিতে পারবে। তিনি বলেন, নিজের কাজ নিজেই করতে পারবে। মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারবে। অন্যের মুখঝামটা খেতে হবে না। তোমরাই পারবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। মনে রাখতে হবে আমরা বিজয়ী জাতি। আমরা কারো কাছে মাথা নত করে চলি না। পাস করার পর চাকরির জন্য ঘুরে বেড়ানোর অভ্যাস পরিত্যাগ করার জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান।
তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে সরকার পরিচালনা সহজ হয়েছে উল্লেখ করে ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোটা পৃথিবী এখন আপনাদের হাতের মুঠোয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো কিছু যখন ভালোভাবে চলে, তখন অনেকে আসেন সেখানে তাদের মামা, সালা, ভাই বা আত্মীয়দের বসানোর জন্য। তবে আমি সতর্ক করে দিতে চাই, যারা জনপ্রতিনিধি—মেম্বার, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর—কেউ যেন আমার এই ডিজিটাল সেন্টারে শিং দিয়ে গুঁতোগুঁতি না করে। যারা উদ্যোক্তা, প্রথম শুরু করেছে, তাদের কেউ সরাতে পারবে না। তাদের স্থান অবশ্যই সেখানে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু জন্ম নিবন্ধনই নয়, আগামীতে মৃত্যু নিবন্ধনও এ সব ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে করা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্য দেশগুলোর চেয়ে আমাদের দেশে তরুণের সংখ্যা অনেক বেশি। ভাত-মাছ খেয়ে বড় হওয়া আমাদের তরুণরা অনেক মেধাবী। তরুণদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা নিয়ে নিজেদের কর্মদক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ডিজিটাল সেন্টারের এত দ্রুত বিকাশ এবং এর মাধ্যমে সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া প্রমাণ করে আমাদের তরুণরা মেধাবী।
উন্নত দেশ গঠনে তরুণদের ভূমিকার প্রশংসা করে ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের মনে রাখতে হবে আমরা পারি আমরা পারব। তোমরাই পারবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। অনেক চড়াই-উত্রাই পার হয়ে অনেক এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।’
সরকার আউটসোসিংয়ের জন্য প্রশিক্ষণ দেবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখন ঘরে বসে শুধু দেশে নয় বিদেশেও অর্থ উপার্জন করা যায়। এ জন্য প্রশিক্ষণ নিতে হবে, শিক্ষা নিতে হবে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে বসে বিদেশেও কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারে সে প্রশিক্ষণও আমরা দেব।
প্রধানমন্ত্রী ইন্টারনেটের ধীরগতির কথা স্বীকার করে স্বল্প সময়ের মধ্যে তা দ্রুত করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, ইন্টারনেটের গতি সময়োপযোগী না। তবে দেশের জনগণ পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিয়ে আমাদের পুনর্নির্বাচিত করেছে। এ জন্য অনেক অসম্পূর্ণ কাজ আমরা শেষ করতে পারব। তিনি বলেন, সরকার ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। যেহেতু সেবা বৃদ্ধি পেয়েছে, ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে সুতরাং ইন্টারনেটের এখন যে স্পিড, তা সময়োপযোগী না। এর গতি আরো বাড়াতে হবে। হাইস্পিডের ইন্টারনেট চালুর জন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা নতুন করে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের পদক্ষেপ নিয়েছি। আরেকটা পদক্ষেপ নিয়েছি, সেটা হলো নিজেরাই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উেক্ষপণ করব। এটা একনেকে পাস হয়েছে। ইন্টারনেটের গতি বাড়লে প্রযুক্তি আরো বিকাশ হবে, আরো সেবা বাড়বে। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় ’৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসায় দ্রুত গতির ইন্টারনেট চালুর জন্য সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। আমরা আবার নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করায় নির্বাচিত সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা পেয়েছে। ফলে আমরা অনেক অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে পারছি।
ডিজিটাল পদ্ধতির সুবিধার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ এত দ্রুত করতে পারব— এটা কেউ ভাবতে পারেনি। মানুষ এখন ২০০-এর মতো ডিজিটাল সেবা গ্রহণ করছে।
সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা ৬৪ জেলায় তথ্য বাতায়ন করেছি। ২৫ হাজার সরকারি দপ্তরযুক্ত বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ চালু করেছি। শিক্ষাখাতে ডিজিটালাইজেশনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা খাতের উন্নয়নে আমরা তথ্য ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। দেশের ২৩ হাজার ৫০০ স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম করেছি। ২৯ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ই-বুক তৈরি করা হয়েছে। এই ই-বুক পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল আর্কাইভে পরিণত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কম্পিউটার শিক্ষার হাতেখড়ির পাশাপাশি ডিজিটাল শব্দটিও তিনি ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকেই জেনেছেন। কম্পিউটার শিক্ষায় ছেলের ভূমিকার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের শিক্ষা গ্রহণের কিন্তু কোনো বয়স নেই। জয় যখন স্কুলে পড়ত, কম্পিউটার নিয়ে আসত, তখন নাড়াচাড়া করে দেখতাম। সে আমাকে কিভাবে টাইপ করতে হয়— একটা প্রোগ্রাম দিয়ে দিত। আমি বসে বসে টাইপ করা প্রথমে শিখলাম। আমি আর আমার বান্ধবী বেবী মওদুদ। এরপর আমরা অ্যাপল কিনলাম। সেখানে আমাদের অফিসের, পার্টির কাজ করার সাথে সাথে নিজেরাও বসে বসে কম্পিউটার শিক্ষা নিতাম।
স্থানীয় সরকার সচিব মঞ্জুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রি সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আমমেদ পলক, ইউএনডিপির বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেকটর প্রমুখ।
২০০৮ সালে ভোটের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ক্ষমতায় আসার পরই গ্রামপর্যায়ে তথ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। এ কার্যক্রমের সূচনালগ্নের ওপর আলোকপাত করে উদ্যোক্তা সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ২০০৮ সালে যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, তখন অনেকেই মনে করেছিলেন—এটা সম্ভব নয়। তবে আজ আর কেউ বলে না, এটা কিভাবে হবে। তিনি বলেন, শুরুর দিকে চিন্তা ছিল— প্রতিটি গ্রামে আমরা সাইবার ক্যাফে করব, যেখান থেকে মানুষ তথ্য সেবা নিতে পারবে— সেটা হয়নি। তবে ২০০৯ সালে আমরা প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ডিজিটাল সেন্টার করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। যদিও তিন বছরের মধ্যে এটা করার কথা ছিল। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই ইউনিয়ন পর্যায়ে এ সেবা আমরা পৌঁছে দিতে সক্ষম হই।
বাংলাদেশে এখন চার হাজার ৫৪৭টি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে। এ ছাড়া, ৩২১টি পৌরসভা ও ১১ সিটি করপোরেশনের ৪০৭টি ওয়ার্ডেও এ  সেন্টার বসেছে। এ সব কেন্দ্র থেকে ৬০ ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা নিতে পারছেন নাগরিকরা, যার মধ্যে জন্ম নিবন্ধন, বিদেশে যাওয়ার জন্য নিবন্ধনসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা রয়েছে। গত চার বছরে এ সব ডিজিটাল কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন বিষয়ে সেবা দানের সংখ্যা প্রায় ১২ কোটিতে পৌঁছেছে। জন্ম নিবন্ধন হয়েছে সাত কোটি মানুষের। আর এ সব ডিজিটাল সেন্টার থেকে মোট আয় হয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। এ সব তথ্য কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তরুণ উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়।

সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, এর আগে আমি রংপুরে গিয়েছিলাম। সেখানে ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তাদের কেউ কেউ আমাকে জানালেন, তারা প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করছেন। তিনি বলেন, এই উত্তরাঞ্চলে পাঁচ-ছয় বছর আগে মঙ্গা হতো, খাদ্যের অভাবে মানুষ প্রাণ হারাত। এখন মঙ্গা তো দূরের কথা, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে বসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করছে তারা। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে— আমরা কোনো দিক থেকে কম নই। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, তবে এটা বাস্তব যে, ইন্টারনেটের স্পিডের দিক দিয়ে আমরা পিছিয়ে আছি। এ দিকে আমরা নজর দিয়েছি। সরকারের এই মেয়াদের মধ্যেই ফাইবার অপটিক কেবল পৌঁছে দেয়া হবে, যাতে উচ্চগতির ইন্টারনেট-সুবিধা পাওয়া যাবে।

Images
Attachments